মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন

সরকারি অনুমতি পেলে শুরু চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতা

সরকারি অনুমতি পেলে শুরু চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতা

স্বদেশ ডেস্ক:

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য নিতে দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে বলে দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তাকে বিদেশে নিতে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি মিললে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে চারটি বিষয় চূড়ান্ত হতে হবে। এক. সরকারের অনুমতি, দুই. সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা, তিন. কোন হাসপাতালে নেওয়া হবে, চার. এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কিংবা বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা। এ চারটি প্রক্রিয়ার কোনোটিই সম্পন্ন হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, এটি প্রক্রিয়ার বিষয়। পুরো বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেখছেন।

দলের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হলে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতিটাই মূল বিষয়। কারণ যে আদেশে তিনি জেল থেকে বের হয়েছিলেন সে অনুযায়ী তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছেন বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় তার মুক্তির আদেশ সংশোধন করলে বিদেশ যাত্রার পথ খুলবে।

দলের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, সরকারের অনুমতি পেলে ভিসার জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোন শহরের হাসপাতালে তাকে নেওয়া হবে তা ঠিক করা হবে। কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

ওই নেতা বলেন, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থায় বিবেচনায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কিংবা বিশেষ বিমানে যুক্তরাজ্য নিতে হবে। কারণ তার শারীরিক অবস্থায় যেসব মেডিক্যাল সাপোর্ট প্রয়োজন তা অন্য কোনো নিয়মিত ফ্লাইটে পাওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সামান্য খারাপ হয়েছে বলে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছেন। তারা বলছেন, তার বয়স বিবেচনায় এ শারীরিক অবস্থাটাই ‘খারাপ’। কারণ এ অবস্থা থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। গতকাল মেডিক্যাল বোর্ড বসে। একজন চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়ার আগে যেখানে অক্সিজেন ২ লিটার লাগত এখন ৩-৪ লিটার লাগছে। চেষ্টের এক্সরে করা হয়েছে, সেখানেও সামান্য সমস্যা দেখা গেছে। তবে গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার তৃতীয়বারে নমুনা টেস্টে তার নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়া গেছে।

এদিকে খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার তার পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারে মুখপাত্র মেহের নিগার জেরিন আমাদের সময়কে বলেন, ‘কোন ইন্ডিভিজুয়াল কেসের ক্ষেত্রে আমরা মন্তব্য করি না। যদি বেগম খালেদা জিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন তা হলে সে বিষয়টি যুক্তরাজ্য সরকার বিবেচনা করে দেখবে।’

মানবিকভাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে- আইনমন্ত্রী

খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বলেছেন, ‘বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদনের বিষয়টি সরকার মানবিকভাবেই বিবেচনা করছে। খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। ফাইলটি বিকালে (গতকাল) পেয়েছি। তবে আজকে তা দেওয়া সম্ভব হবে না।’ আইনমন্ত্রী গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের আরও জানান, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে আবেদনের ফাইল পর্যালোচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এর আগে সকালের দিকে আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদার বিদেশে যাওয়ার আবেদন গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। সচিবের কাছ থেকে ফাইল আসার পর আইনে কী বলে সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। খালেদা জিয়াকে দুটি শর্তে শাস্তি স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ৪০১ ধারার শর্ত মেনে বিবেচনার সুযোগ আছে কিনা সেটা দেখতে হবে।

প্রক্রিয়া কী হবে

গতকাল বিকালে আইনমন্ত্রীর গুলশানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নথি নিয়ে যান আইন সচিব গোলাম সারওয়ার। খালেদা জিয়াকে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি কী হবে তা আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। উত্তরে তিনি বলেছেন, আমরা মতামত দিলে সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সামারি হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। মন্ত্রী মহোদয় (আইনমন্ত্রী) সিদ্ধান্ত দিলে, তখন বাকিটা হবে। ওই আবেদনে খালেদা জিয়াকে কোন দেশে নিতে চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, না, উনারা কোনো দেশ উল্লেখ করেননি। শুধু চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা বলেছেন। আর কিছু বলেননি।

পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন

নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্টের জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আবেদনকারীর স্বাক্ষর থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে সেই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সেটি দেওয়া হবে। ২০১৯ সালে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বিএনপি নেত্রীর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, দ-প্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তার পক্ষে আবেদন করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তিনি দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট পাবেন।

মানবিক কারণে বিদেশ যেতে দিন- ফখরুল

গতকাল সকালে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, করোনারপরবর্তী জটিলতায় কিন্তু মাঝে মাঝে টার্ন নেয় বিভিন্ন দিকে। তার (খালেদা জিয়া) বয়স, বিভিন্ন রোগ আছে। এর আগে তিনি প্রায় তিন বছর কারাগারে ছিলেন, এখনো তিনি অন্তরীণই।

এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এবারে তার জটিলতাও হয়েছে। দেশের প্রায় বেশিরভাগ মানুষের আকাক্সক্ষা বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাটা উন্নত কোনো হাসপাতালে হওয়া উচিত। বাংলাদেশে উন্নত হাসপাতালেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরও উন্নত বিদেশে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব কিনা। গতকাল (বুধবার) তার পরিবার থেকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আশা করি, সরকার মানবিক কারণে দেশের ১৮ কোটি মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ২৭ এপ্রিল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীনে র?য়েছেন। তাকে এখানে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং আমাদের চিকিৎসকরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তার চিকিৎসা করছেন। বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, তারা তাদের নেতাকে সুস্থ দেখতে চায়।

আজ শুক্রবার দোয়া-প্রার্থনা করা হবে

খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় আজ শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিভিন্ন উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ) শুক্রবার পবিত্র জুমাতুল বিদা। সারাদেশে সব মসজিদ, বিভিন্ন প্রার্থনালয় যেগুলো আছে অন্যান্য ধর্মের সেগুলোয় আমাদের সব ইউনিট দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য দোয়া অনুষ্ঠান করবেন, প্রার্থনা সভা করবেন। আমি সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করছি যে, তারা যেন জনগণকে নিয়ে দেশনেত্রীর রোগমুক্তির জন্য দোয়া চান।

মান্নার উদ্বেগ : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, যতদূর জেনেছি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কারাবন্দি হওয়ার আগে থেকেই তার বেশ কিছু অসুখ ছিল। প্রায় দুই বছর কারাবন্দি থাকায় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক। এই অবস্থায় সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও একজন বীরউত্তমের স্ত্রী হিসেবে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ উদ্বেগের কথা জানান।

মান্না বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অসুস্থতাকে যেভাবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছিল, খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও সরকার একই রকম উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করি। ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতে প্রয়োজনে অতিদ্রুত বিদেশে নেওয়ার দায়িত্বও সরকারের। অন্তত এ ক্ষেত্রে সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা না দেখিয়ে মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দেবে বলে প্রত্যাশা করি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877